একজন আতিকুল ইসলাম

আতিকুল ইসলাম একজন সফল ব্যবসায়ী, উজানে সাঁতার কেটে যুদ্ধজয়ী এক আদর্শ মানুষ। তৈরী পোশাকশিল্পের একজন ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেই আতিকুল ইসলাম বেশী পরিচিত তবে বেশ কিছু ক্রীড়া এবং সামাজিক কার্যক্রমও তিনি বলিষ্ঠ হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যে কাজে সমাজের ভাল হবে, মানুষের ভাল হবে, তিনি তাতে নিজেকে বিলিয়ে দেন। আর এই তাড়না থেকেই ঢাকা মহানগর উত্তর নিয়ে তিনি বিশেষ পরিকল্পনা তৈরী করেছেন। একটি সবুজ, চলমান, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত শহর গড়া দৃঢ় প্রত্যয়ী, ব্যক্তিত্ববান ও কর্মঠ আতিকুল ইসলামের বর্তমান লক্ষ্য। রাজধানী ঢাকায় শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্য পেরিয়ে আসা আতিকুল ইসলাম পণ করেছেন আন্তরিকতা, পরিশ্রম, প্রত্যয় ও স্বকীয় পরিকল্পনা দিয়ে এ শহরকে নতুন করে সাজাবেন। আর এই আন্তরিক ও প্রত্যয়ী ইচ্ছেকে তিনি বাস্তবে রূপ দিতে চান ঢাকা মহানগর উত্তরের সবাইকে সাথে নিয়েই। আতিকুল ইসলাম এমন একজন মানুষ যিনি সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে পথ হাঁটেন। ভোগ, বিলাসিতা তাকে টানে না। তাকে শুধু টানে কাজ আর সংকল্পের বাস্তবায়ন। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হককে যেখানে থেমে যেতে হয়েছে, সেখান থেকেই যাত্রা শুরু করতে চান আতিকুল ইসলাম। নিজ চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সৃজনশীলতা আতিকুল ইসলাম ইতিমধ্যেই তুলে ধরেছেন দেশবাসীর কাছে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর গোটা দেশ যখন শোকে বিহ্বল, স্তম্ভিত, নির্বাক হয়েছিল, তখন আতিকুল ইসলাম মানবতার হৃদয় উন্মোচিত করে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন, পরিশ্রম করেছেন। সেখানে তিনি বিজিএমইএ’র সভাপতি হিসাবে নয়, নিজেকে মেলে ধরেছিলেন একজন সচেতন সমাজকর্মী হিসেবে। রানা প্লাজা ট্রাজেডির সেই বিপর্যস্ত সময়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল বিদেশি ক্রেতারা এদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেবে, বাংলাদেশ থেকে আর তৈরী পোশাক নেবে না। তাতে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী এই শিল্পখাত ধ্বসে পড়তো, বেকার হয়ে যেত চল্লিশ লাখেরও উপর পোশাক শ্রমিক, যার বিরুপ প্রভাব এসে পড়তো সামগ্রিক অর্থনীতির উপর। বিজিএমইএ’র সভাপতি হিসেবে সেই সময় আতিকুল ইসলাম মাথা ঠাণ্ডা রেখে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে বাংলাদেশের তৈরী পোশাকশিল্প মাথা তুলে দাঁড়াবার সামর্থ্য রাখে। পর্যায়ক্রমে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কারখানার কমপ্লায়েন্স এবং শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া তিনি অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করেন। আতিকুল ইসলামের সময়োচিত সিদ্ধান্ত ও তৎপরতায় দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় এই শিল্পখাত, বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পায় দেশের অর্থনীতি। বিজিএমইএ’র উদ্যোগে ২০১৪ সাল থেকে আতিকুল ইসলাম শুরু করেন ‘ঢাকা এ্যাপারেল সামিট’ আয়োজন, যা দারুণ ভাবে প্রশংসিত হয় আন্তর্জাতিক পোশাক ক্রেতামহল ও বিশেষজ্ঞদের কাছে। তার প্রচেষ্টায় পোশাক শ্রমিকদের চিকিৎসার প্রয়োজনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে কয়েকটি হাসপাতাল। এছাড়াও তার উদ্যোগে পর্যায়ক্রমে সকল পোশাক কারখানায় দুইজন করে অটিস্টিক কিশোরের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহনের পর আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভলিবল দল ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ভলিবল টুর্নামেন্ট’- এ চ্যাম্পিয়ন হয়। সেটাই ছিল বাংলাদেশ ভলিবল দলের কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতা। ক্রীড়াঙ্গনে দায়িত্বশীল পদে থাকার সাথে সাথে নিজের ও প্রিয়জনদের শরীরচর্চ্চায় বিশেষ মনোযোগী তিনি। বন্ধুদের নিয়ে প্রতিদিন সকালে বাসার পাশে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে অনেকটা সময় ধরে জগিং করেন। এ এলাকার সাধারণ মানুষদের শরীরচর্চা, স্পোর্টস এবং আড্ডার কেন্দ্র হিসেবে আতিকুল ইসলামের উদ্যোগেই গড়ে উঠেছে ‘বাংলাদেশ ক্লাব’।

পরিবার

মা মাজেদা খাতুন ও বাবা পুলিশ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মরহুম মমতাজউদ্দিন আহমেদের ১১ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ হচ্ছেন আতিকুল ইসলাম। স্নেহময়ী ও আদর্শবান মায়ের অসীম অনুপ্রেরণা আর সৎ পুলিশ কর্মকর্তা বাবার অনুশাসনে বেড়ে ওঠা আতিকুল ইসলামের ভাই-বোনরা সকলেই শিক্ষিত এবং নিজ নিজ পেশায় প্রতিষ্ঠিত। সবচেয়ে বড় ভাই প্রখ্যাত প্রকৌশলী ও সফল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম যার হাত ধরে তরুণ বয়সে আতিকুল ইসলাম ব্যবসা অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তাঁর মেজভাই অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জনাব তোফাজ্জল ইসলাম যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে সই করেন এবং পরবর্তী সময়ে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। আরেক ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইনুল ইসলাম, যিনি বিডিআর বিদ্রোহের পর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পেয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাহিনীটিকে পুনর্জীবিত ও পুনর্গঠন করেন। পরবর্তীতে মইনুল ইসলাম চিফ অব জেনারেল স্টাফ এবং প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের দায়িত্বও পালন করেন।

বেড়ে উঠা

আতিকুল ইসলামের দেশের বাড়ী কুমিল্লার দাউদকান্দি তবে ১৯৬১ সালের ১ জুলাই বাবার তৎকালীন কর্মস্থল সৈয়দপুরে তার জন্ম। সাংস্কৃতিমনা ও প্রগতিশীল পরিবারের শান্ত ও মিশুক এ ছেলেটি শৈশব ও কৈশোর জুড়ে ছিলেন মা-বাবা আর ভাই-বোনদের চোখের মনি। ঢাকার বিএএফ শাহীন স্কুল ও কলেজ থেকে আতিকুল ইসলাম যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি স্কুল জীবনে তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এর সর্বোচ্চ অবস্থানে সফলতার সাথে নেতৃত্ব দেন ।

কর্মক্ষেত্র

বড় ভাই প্রখ্যাত প্রকৌশলী ও সফল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের হাত ধরে ১৯৮৫ সালে আতিকুল ইসলাম ব্যবসা অঙ্গনে প্রবেশ করেন এবং ধীরে ধীরে গড়ে তুলেন স্বনামধন্য ইসলাম গার্মেন্টস। ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি সেইসময় তিনি স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ব্যবসা শুরুর প্রথম থেকেই তাঁর প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত করে এসেছেন শ্রমিক-বান্ধব ও আন্তরিক পরিবেশ। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ১৯,০০০ মানুষ। ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে আতিকুল ইসলাম পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালকের পদ লাভ করেন এবং দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। নব্বইয়ের দশকে দেশের পোশাক কারখানাগুলো থেকে শিশুশ্রম নিরসনে আতিকুল ইসলাম অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও কার্যকর ভূমিকা রেখেছিলেন। বিদেশী ও দেশী সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে তিনি নিশ্চিত করেছিলেন পোশাক কারখানাগুলোতে যেন শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া না হয়। আতিকুল ইসলামের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারনে পোশাক শিল্পে ধাপে ধাপে শিশুশ্রম নির্মূল হয়েছে। বন্ধুভাবাপন্ন, দায়িত্ববান আর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের গুণেই ২০১৩ সালে বিজিএমইএ 'র নির্বাচনে সর্বকালের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে তিনি সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হন। আতিকুল ইসলাম দেশের তৈরী পোশাক শিল্পে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইথ প্রাইডে’র জনক। বিজিএমইএ’র সভাপতি হিসাবে তিনিই প্রথম ‘ঢাকা এ্যাপারেল সামিট’র আয়োজন করেন যেখানে বিদেশী ক্রেতারা আগ্রহ ও উৎসাহ নিয়ে বাংলাদেশে আসেন বিপুল পরিমানে অর্ডার নিয়ে। আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বেই পোশাক শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল গড়ে তোলে বিজিএমইএ। আতিকুল ইসলামের উদ্যোগে পর্যায়ক্রমে সকল পোশাক কারখানায় দুইজন করে অটিস্টিক কিশোরের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। তার দুরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গী বিজিএমইএর কার্যক্রম এবং ইমেজ কে এগিয়ে নিয়েছে নতুন উচ্চতায়।

দিনযাপন

ঘরে আতিকুল ইসলাম একজন অপার স্নেহশীল বাবা আর বন্ধুসম স্বামী। সহজ, সাধারণ লাইফস্টাইলই তাঁর সুখী জীবনের ভিত্তি। স্ত্রী ডেন্টাল সার্জন শায়লা সাগুফতা ইসলাম এবং ‘গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’- এ গ্রাজুয়েশন করা একমাত্র সন্তান বুশরা আফরিনকে নিয়ে আতিকুল ইসলামের দিনযাপন। তার সকল কাজ ও সকল সাফল্যের পেছনেই স্ত্রী শায়লা সাগুফতার সার্বক্ষনিক অনুপ্রেরণা রয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি এই মানুষটির জীবনের মুল লক্ষ্য ভাল কাজ আর কমিটমেন্ট পূরণ করা। ফজরের নামাজ আদায় করে দিন শুরু হয় তার। তারপর স্বদলবলে মর্নিংওয়াক করেন। এটি তার বহু বছরের অভ্যাস। নিজের ও প্রিয়জনদের শরীরচর্চ্চায় বিশেষ মনোযোগী তিনি। বন্ধুদের নিয়ে প্রতিদিন সকালে বাসার পাশে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে অনেকটা সময় ধরে জগিং করেন। এই এলাকার সাধারণ মানুষদের শরীরচর্চা, স্পোর্টস এবং আড্ডার কেন্দ্র হিসেবে আতিকুল ইসলামের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ‘বাংলাদেশ ক্লাব’। মানবিকতা ও কোমলতায় পূর্ণ আতিকুল ইসলাম মানুষের প্রয়োজনে, মানুষের কল্যাণে সবসময়ই রয়েছেন অগ্রণী ভূমিকায়। তার উদ্যোগে সেই এলাকায় গঠিত হয়েছে ‘হাঁটি হাঁটি খাই খাই’ নামের এক সংগঠন যার সদস্যরা হাঁটতে ভালবাসেন আর হাঁটতে হাঁটতেই সমাজসেবা করেন। বাসায় সারা বছর জুড়েই নিয়মিত বসে পারিবারিক আড্ডা ও হৈ-হুল্লোড়ের আসর। পারিবারিক আয়োজনগুলোতে সংস্কৃতিমনা আতিকুল ইসলাম বাদ রাখেন না বিনোদনের অংশটুকুও। ঘরোয়া আমেজে থাকে আমন্ত্রিত শিল্পীদের গান পরিবেশনা, যেখানে আতিকুল ইসলামকেও দেখা যায় হারমোনিয়াম, তবলা, ঢোল নিয়ে অংশগ্রহন করতে। লোকসংগীতের প্রতি রয়েছে তাঁর বিশেষ অনুরাগ। কোলাহলের বাইরে নিজ গ্রামের পুকুরে মাছ ধরার আনন্দ দারুন উপভোগ করেন আতিকুল ইসলাম। ধর্মপ্রাণ আতিকুল ইসলাম রাজধানীর উত্তরখানের মইনারটেক-এ প্রতিষ্ঠা করেছেন দারুল কুরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা। আর তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিজ গ্রামসহ দেশের অন্যান্য জায়গাতে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া তিনি সম্পৃক্ত আছেন বিভিন্ন সেবামূলক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাথে।